নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারস্থ শাপলাপুর ফোরামের প্রথম বার্ষিক মিলন মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।  শনিবার (২৭ জানুয়ারী) কক্সবাজার শহরের বালিকা মাদ্রাসা রোডের কবিতা চত্ত্বরে এই মিলন মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে কক্সবাজারে বসবাসরত শাপলাপুরবাসি সহ শাপলপুরের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সমাগম হয়। উক্ত মিলন মেলার আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে কক্সবাজারস্থ শাপলাপুর ফোরামের আহ্বায়ক ও কক্সবাজার সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক এম. আমান উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অত্র সংগঠনের সদস্য সচিব ও কক্সবাজার জেলা আদালতের আইনজীবী এম.সাঈদ হোসাইন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া )আসনে তিন তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাপলাপুর ইউনিয়নে চারবারের নির্বাচিত সফল চেয়ারম্যান ও মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি এড.এস.এম. আব্দুল খালেক চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আশেক উল্লাহ রফিক এমপি শুরুতে শাপলাপুরবাসির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, গত ৭ জানুয়ারী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শাপলাপুরের মানুষ আমাকে স্বতঃস্ফুর্ত ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয়ী করেছেন। তৎকালীন সময়ে মহেশখালীর অবকাঠামোগত পিছিয়ে থাকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এই জনপথে হাট-বাজার থেকে শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই হতাশাজনক ছিলো। এখানকার মানুষের খাদ্যের টানাপোড়নের চিন্তায় পড়ালেখা করা যেন বিলাসী জীবন পার করা এমন মনোভাব পোষণ করতো। বর্তমান সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টিতে মহেশখালীসহ সারা দেশে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে মহেশখালীতে ঘরে ঘরে শিক্ষিত সন্তান রয়েছে। এসময় তিনি শাপলাপুরের সড়ক ১৮ ফুট প্রশস্তকরণ ও কালভার্ট সংস্কার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ভূমিহীনদের জন্য গৃহায়ণের ব্যবস্থা, স্যনিটাইজেশন সুবিধাসহ অনেক উন্নয়নের চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন। শাপলাপুরের মানুষকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কোনো প্রতারক চক্রের হাতে পড়ে বিভিন্ন কোম্পানিকে জমি বিক্রি করবেন না। একসময় এই জমি অনেক মূল্যবান হয়ে উঠবে। শাপলাপুর ট্যুরিস্ট এলাকা হবে। মহেশখালীতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সহজে চাকরি পাওয়ার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে তিনটি টেকনিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে হবে। তারমধ্যে একটি টেকনিক্যাল কলেজ শাপলাপুরে নির্মিত হবে। মহেশখালী দেশের অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেবে। শাপলাপুরকে স্মার্ট ইউনিয়নে রুপান্তরের লক্ষ্যে সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে। তাই স্মার্ট শাপলাপুর গড়তে কক্সবাজারস্থ শাপলাপুর ফোরামকে একতাবদ্ধ হয়ে সবাইকে এক সাথে কাজ করার অনুরোধও জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক চৌধুরী শাপলাপুরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন। এসময় তিনি বলেন, শাপলাপুর ইউনিয়নের উন্নয়ন বিরোধী কুচক্রী মহল কোনো সময় সফল হতে পারে নাই। ভবিষ্যতেও পারবে না। শাপলাপুরের জনগণ তাদেরকে ঘৃণাভরে বর্জন করেছে। কক্সবাজারেও একটি চক্র অরাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানার নাম দিয়ে জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির বীজ বপন করতেছে। তাদের ষড়যন্ত্রে আমরা পা দিই নাই। আমরা কক্সবাজারস্থ শাপলাপুর ফোরামকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার জন্য তিনি আহ্বানও করেছেন। কোনো ভেদাভেদ নেই, এখানে কোনো রাজনীতিও নাই। মহেশখালী শাপলাপুরের কথা যখন আসে জাতি, ধর্ম,বর্ণ ও রাজনীতি উর্ধ্বে রেখে এলাকার মানুষের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাই। এই ফোরামের মাধ্যমে জনগণকে একতাবদ্ধ করা সহ তাদের পাশে সবসময় থাকবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এসময় বক্তব্য রাখেন শাপলাপুর ইউনিয়নের প্রবীণ শিক্ষক খলিলুর রহমান, শাপলাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ডাঃ ওসমান সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মাহমুদ, শাপলাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এম সাঈদুল ইসলাম চৌধুরী, শাপলাপুরের কৃতী সন্তান নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এস এম জাহাঙ্গীর আলম, শাপলাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও শাপলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আলী, এনজিও কর্মকর্তা আবিদুর রহমান, মাস্টার ফখরুল ইসলাম, শাপলাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শাহাব উদ্দিন, শাপলাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, মোঃ আমিন ও অজিত কুমার সহ অনেকে।
অন্যান্যদের মধ্যে ফোরামের সকল সদস্য ও তাদের পরিবারসহ কক্সবাজারে বসবাসরত শাপলাপুরের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে দুপুর ১২ টায় উক্ত ফোরামের বার্ষিক মিলন মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। এসময় ফোরামের পক্ষ থেকে প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ও বিশেষ অতিথি আব্দুল খালেক চৌধুরীকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর্বে জনপ্রিয় কন্ঠ শিল্পী ও আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শিল্পী বুলবুল আক্তার, মুন্নি চৌধুরী, পারভেজ খান সহ চট্টগ্রাম থেকে আগত ক্ষুদে শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। শেষে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ আকর্ষণ র‌্যাফল ড্র। এতে বিজয়ী তেইশ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ফোরামের আহ্বায়ক এম. আমান উল্লাহ তার সমাপনী বক্তব্যে বার্ষিক মিলন মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।